Friday, October 19, 2018

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের ঐতিহ্য (The sixty domed mosque is the tradition of Bangladesh)



বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। গায়ে কোনো শিলালিপি না থাকায়  কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থাপত্যশৈলী দেখে খান-ই-জাহান নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় ১৫শ শতাব্দীতে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি দৈর্ঘ্যে ১৬৮ ফুট, প্রস্থে ১০৮ ফুট এবং দেয়ালগুলো ৮ ফুট করে চওড়া। ৬০টি স্তম্ভের উপর নির্মিত। একটি মতে পাওয়া যায়, মসজিদটি যে ষাটটি পাথরের স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, ফারসি ভাষায় তাকে বলা হয় খামবাজ। অর্থাৎ ৬০টি খাম্বার উপর দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির নাম ষাট খামবাজ থেকে ষাট গম্বুজ হয়েছে। একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ অাদায় করতে পারে। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ষাট গম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করে।


অবস্থান (Location):


ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোকিটার দুরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাসে ষাটগুম্বজ বাসস্টপেজ লাগোয়া সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত। খান জাহান আলী ( রঃ) মাজার থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন(how to go):


ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেকগুলা গাড়ী ছেড়ে যায় – মেঘনা (০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩), বনফূল, পর্যটক (০১৭১১১৩১০৭৮), ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা। এছাড়া গাবতলী থেকে সোহাগ (০১৭১৮৬৭৯৩০২), শাকুরা (০১৭১১০১০৪৫০), হানিফ ও ইগল পরিবহন ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা। আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা গিয়ে এরপর বাস ধরে বাগেরহাটে যেতে পারেন। রূপসা থেকে বাগেরহাটে যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে।

কোথায় থাকবেন(where to stay)ঃ


বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল আছে । এছাড়াও সরকারি গেস্টহাউস আছে। এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামোটি ভাল এবং খরচও একটু বেশি। এছাড়া এই হোটেলের আশেপাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে। তাছাড়া খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন “হোটেল অভি”-তে । ভাড়া ৪০০ টাকা। ফোন: ০১৮৩৩৭৪২৬২৩। এছাড়া বাগেরহাটে থাকার জন্যে হোটেলের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল আল আমিন (০৪৬৮-৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭, এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার টাকা, নন এসি কক্ষ ১শ’ থেকে ৪শ’ টাকা) এবং কর্মকার পট্টিতে হোটেল মোহনা (০৪৬৮-৬৩০৭৫, ০১৭২২৮৫৮৩১৩, ১শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় নন এসি কক্ষ) আছে। খুলনা থেকে বাগেরহাটে আসতে সময় ১ ঘণ্টা লাগার কারনে খুলনাতেও থাকা যায়।

খাবার সুবিধাঃ


এখানের খাবার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে, তাই খাবার জন্য বাসষ্ট্যান্ড অথবা খানজাহান আলী মাজারের পাশে যেতে পারেন। তবে অবশ্য খাবার দাম ও মান সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

আশে পাশের দর্শনীয় স্থানসমুহঃ


১. খান জাহান আলী ( রঃ) মাজার
২. বাগেরহাট জাদুঘর
৩. মংলা বন্দর
৪. নয় গুম্বুজ মসজিদ।

টিকেট মূল্য ও খোলা বন্ধের সময় সুচীঃ


জনপ্রতি টিকেট এর দাম বিশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য দুইশত টাকা করে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২.০০ থেকে খোলা থাকে।

ষাট গম্বুজ মসজিদের বিবরণ(Discription of sixty dome mosque):


এই মসজিদটি বহু বছর ধরে এবং বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এর পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে একটি। মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট এবং ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট এবং ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেওয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট। মসজিদের ভেতরে মেঝে হতে ছাদের উচ্চতা প্রায় ২১ ফুট। যদিও মসজিদটি ষাটগম্বুজ নামে পরিচিত কিন্তু এতে মোট গম্বুজ আছে ৮১টি। মসজিদের চার কোনের মিনার বা বুরুজের উপরের ৪টি গম্বুজ বাদ দিলে গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি। আর ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং মধ্যের একটি সারিতে ৭টি গম্বুজ চারকোণবিশিষ্ট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ মোট ২৬টি দরজা আছে। ধূসর বেলেপাথরে নির্মিত কেন্দ্রীয় মিহরাবটি মুসলিম রীতির অগভীর ও নিচু রিলিফের খোদাইকর্মে অলঙ্কৃত, যা পার্শ্ববর্তী মিহরাব ও খান জাহানের সময়ে নির্মিত অন্যান্য ভবনের খোদাইকর্ম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্পূর্ণ ইট নির্মিত বাকি নয়টি মিহরাবের সম্মুখভাগ খাঁজকাটা। যদিও তাদের বেশিরভাগ অলঙ্করণ বর্তমানে বিলীন, তবু এখনও যা কিছু টিকে আছে তাতে এটি প্রতীয়মান যে, অতীতে এগুলো চমৎকারভাবে পোড়ামাটি দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল। মসজিদটির পরিকল্পনার সাথে দিল্লি ও লাহোরের বাদশাহী মসজিদের মিল রয়েছে। মসজিদটিতে তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট। স্থাপত্য কৌশলে ও লাল পোড়া মাটির উপর লাতা পাতার অলংকারণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্যে শিল্পে নির্মিত এই মসজিদ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক উৎকৃষ্ট সাক্ষী হয়ে এগিয়ে চলছে মহাকালের দিকে। কামনা করি এ যাত্রা অব্যাহক থাকুক অনন্তকাল।

ষাট গম্বুজ মসজিদ নতুন নতুন ছবি দেখতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। 


আরো পড়ুনঃ

“বাঁশবাড়ি সমুদ্রসৈকত” (Bashbari sea beach)


No comments:

Post a Comment