Tuesday, October 23, 2018

সাগর কণ্যা কুয়াকাটা - অপরুপ সৌন্দর্যের হাতছানি ( kuakata is the beautiful sea beach of Bangladesh)


অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্র সমুদ্রসৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। সমুদ্রের পেট চিরে সূর্যোদয় হওয়া এবং সমুদ্রের বক্ষে সূর্যকে হারিয়া যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার। আর এই ঘটনা অবলোকন করা যায় বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি সুমদ্র সৌকত থেকে যার মধ্যে বাংলাদেশের কুয়াকাটা একটি। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এই সাগরকন্যা তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।এখানে আরো যা দেখবেনঃ শুটকি পল্লী, ফাতরার বন, ওয়াটার মিউজিয়াম,গঙ্গামতির জঞ্জল,রাখাইন মার্কেট, ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান, মাজিদবাড়িয়া মসজিদ ও আরো অনেক কিছু।

কি কি দেখবেন কুয়াকাটায়(What will you see in Kuakata):


বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে "সাগরকন্যা" খ্যাত ভ্রমণ স্বর্গ কুয়াকাটা। সাগরের বুকে এখান থেকেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যায় এখানে। কথিত আছে, ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন আরাকান ছেড়ে নৌকাযোগে অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। চলতে চলতে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরের রাঙ্গবালি দ্বীপ খুঁজে পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে। সাগরের লোনা পানি ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তারা এখানে একটি কূপ খনন করে। পরবর্তীতে এ স্থানের নাম দেয়া হয় কুয়াকাটা। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত বলা যায়। এ সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় আঠারো কিলোমিটার। আর প্রস্থে প্রায় তিন কিলোমিটার। পুরো সৈকত ঘিরেই রয়েছে নারিকেল বাগান। জোয়ারের সাথে সাথে পুরো সৈকত তলিয়ে যায় তাই এই সময় পানিতে নামতে সতর্কতা অবলম্বণ করা দরকার।যারা সৈকতে বাইক চালাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে সুখবর। এখানে ভাড়ায় মোটর বাইক পাওয়া যায়। প্রতি কিলমিটার ১০টাকা।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের একেবারে পশ্চিম পাশে আছে জেলে পল্লী। মাছের শুঁটকি তৈরির বিশাল একটি এলাকাও আছে এখানে। এছাড়া পুরো সৈকত জুড়েই সারা বছর দেখা মিলবে মাছ শিকারীদের বিভিন্ন কৌশলে মাছ ধরার দৃশ্য। কুয়াকাটার পুরো সৈকতে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মটর সাইকেলের ব্যবস্থা।

কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দির, নাম সীমা বৌদ্ধ মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি। কেরানিপাড়া সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুনন। এদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।

কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় একটি মাছ ব্যবসা কেন্দ্র আলীপুর। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলার বঙ্গোপসাগরে যায় মাছ ধরতে। আলীপুর বন্দর ঘুরে দেখতে পারেন বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছের বিশাল আয়োজন।

মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আরেকটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। এ মন্দিরেই রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। যাহার উচ্চতা প্রায় ৩তলা ব্লিডিং এর সমান।

এখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি। গঙ্গামতির জঙ্গল কুয়াকাটা সুমুদ্র সৈকত পূর্ব দিকে শেষ হয়েছে গঙ্গামতির খালে গিয়ে। আর এখানে শুরু হয়েছে গঙ্গামতির বা গজমতির জঙ্গল। বিভিন্ন রকম গাছপালা ছাড়াও এই জঙ্গলে দেখা মিলতে পারে বন মোরগ, বানর ও নানা রকম পাখির।

ফাতরার বন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে নদী পার হলেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এরই নাম ফাতরার বন। এ জায়গাটি অবিকল সুন্দরবনের মতো হলেও হিংস্র কোন বন্যপ্রাণী নেই বললেই চলে। বন মোরগ, বানর আর বিভিন্ন রকম পাখিই এ বনে বেশি দেখা যায়। তাই এখানে নিরাপদের ভ্রমন করে সুন্দরবন ভ্রমন না করতে পারার আক্ষেপ কিছুটা কমিয়ে নিতে পারেন।

লেবুর চর নামে একটা জায়গা থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। এক পাশে সমূদ্র আরেক পাশে তিন নদীর মোহনা, অপর পাশে উপকূলীয় বন, নদীর ওপারে দেখা যায় ফাত্রার বন- সব মিলিয়ে জায়গা টা অসাধারন। মোটর সাইকেল করে সহজেই ঘুরে আসা যায়।

কিভাবে যাবেন কুয়াকাটা(how to go kuakata):


ঢাকা থেকে বরিশাল এর লঞ্চ গুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর ঘাট থেকে ছাড়ে। এর মধ্যে সুন্দর বন, সুরভী, পারাবর লঞ্চ গুলো ভাল। আগ্রহী রা ঢাকা-বরিশাল রুটের নতুন লঞ্চ “কীর্তনখোলা’র” ডিলাক্স সার্ভিস ও এই যাত্রায় উপভোগ করতে পারেন। লঞ্চ গুলো বরিশাল পৌঁছায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে। ডেক ভাড়া সাধারনত ১০০ টাকা। বরিশাল থেকে মাইক্রো বাস ভাড়া করে সরাসরি কুয়াকাটা পৌঁছানো সম্ভব। সেইক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশী পরবে। দামাদামি করলে ৩৫০০টাকার মধ্যে ভাড়া পাওয়া সম্ভব।

ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে "সাকুরা পরিবহন" ছাড়াও বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকাটায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা। গাবতলী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস কুয়াকাটা যায় । এদের মধ্যে সুরভী, সোনারতরী, সাকুরা বাস অন্যতম । সকাল সন্ধ্যা যেকোন সময়ের বাস পাবেন । ভাড়া সুরভীতে শুধুমাত্র ৭৫০ বাকিগুলোতে ৬৫০ । আমরা ৯টার বাসে উঠেছিলাম কুয়াকাটা যাই ৫.২০ এর দিকে । মোটামুটি ৯-১০ ঘণ্টা লাগে বাস এ যেতে এবং কেবল দুটি ফেরী পার হতে হয় ।

পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রাস্তা বিশ্বমানের। আর বরিশাল হয়ে গেলে, বরিশাল থেকে পটুয়াখালি পর্যন্ত রাস্তা খুব একটা সুবিধার না।

কোথায় থাকবেনঃ


কুয়াকাটায় প্রচুর হোটেল রয়েছে। ৩০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার হোটেল পর্যন্ত রয়েছে। একেবারে সী-বিচের কাছে কিছু হোটেল রয়েছে। এছাড়া পর্যটনের হোটেলও আছে। থাকা নিয়ে সমস্যা নাই, যেকোনো হোটেলে আরামে থাকা যাবে। সিন্ড্রলিনা রির্সোট টাউন নামে একটি হোটেল আছে যা বীচ থেকে একটু দূরে, তবে যারা নিড়িবিলি থাকতে পছন্দ করেন তারা এখানে থাকতে পারেন। এই হোটেলের স্টাফদের ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবে।

 কুয়াকাটায় কি কাবেন(food):


কুয়াকাটা খাবারের মান অতোটা ভালো না এবং দাম কিঞ্চিৎ বেশি বলে মনে হয়।তবে লেবুর চরের লাল কাঁকড়া ও চিড়িং মাছ আপনার প্রিয় খাবারের তালিকা সম্রদ্ধ করবে। তাছাড়া সাগর পাড়ে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে যেখান দরদাম করে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন।

ভ্রমণ পরিকল্পনাঃ


১ম দিনঃ হোটেলে চেকইন করে সেরে নিতে পারেন সমুদ্রস্নান।বিকালে যেতে পারেন আন্দারমানিক এবং লেবুর চর। সেরে নিতে পারের বিকালের নাস্তা অর্থাৎ খেতে পারেন এখান কার বিখ্যাত লাল কাঁকড়া অথবা চিড়িং মাছ ভাঁজি।

২য় দিনঃ পরের দিন ভোরে সুর্য উদয় দেখতে যেতে পারেন চর গঙ্গামতি। মোটর বাইকই একমাত্র যান এখানে যাবার।তাই আগের দিনই ঠিক করে রাখুন বাইক।এখান থেকে যেতে পারেন সীমা বৌদ্ধ বিহার ও রাখাইন পল্লী। এর পর কিছুটা বিশ্রাম নীয়ে দেখতে পারেন কুয়াকাটার কুয়া, প্রাচীন নৌকা এবং শ্রীমঞ্জল বৌদ্ধ বিহার। সৈকতের কাছেই আছে জাতীয় উদ্যান সেখানে ঘুরাঘুরি করে ফিরে আসুন হোটেলে আর রাতে বেড়াতে পারেন রাখাইন মার্কেটে।

৩য় দিনঃ সকালে নাস্তা সেরে ঘুরে আসুন ফাতরার চর ও শুটকি পল্লী যাতে সময় লাগবে মাত্র ৪ঘন্টা। বাকি সময় নিজের মত উপভোগ করুন। পটুয়াখালী হয়ে লঞ্চে ফিরতে চাইলে ২.৩০মিনিটের মধ্যে বেড়িয়ে পড়ুন পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাটের উদ্দেশ্যে। এখান থেকে বিকাল ৫টার মধ্যেই সকল লঞ্চ ছেড়ে যায়। আর বাসে ফিরতে চাইলে সন্ধ্যা ৬-৮টার মধ্যে বাসে উঠতে হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে।

1998 সালে কুয়াকাটা পর্যটক কেন্দ্র ঘোষিত হয়। তার পর থেকেই এটি সাগরকণ্যা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।প্রতি বছর এখানে বহু দেশি বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে এই সাগর তীরে।


 কুয়াকাটার(kuakata) নতুন নতুন ছবি দেখতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। 

আরো পড়ুনঃ

ময়মনসিংহের কুমিরের খামার (Crocodile farms of Mymensingh)


No comments:

Post a Comment