Saturday, October 20, 2018

মহাস্থান গড় - বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র (Mahasthan gor - Historical Places and Tourism spot in Bangladesh)


মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা হয়। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন নগররাষ্ট্র এবং তার ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নস্থল হিসাবে সমগ্র বিশ্বের পর্যটক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে মহাস্থানগড় আকর্ষণীয় ভ্রমন স্পট। মহাস্থান গড় বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান হতে বহু লোক সমাগম ঘটে। বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হতে একবার হলেও ঘুড়ে যান এই অসাধারণ ঐতিহাসিক স্থানটি।

অবস্থান (Location):


এর অবস্থান  বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়   বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন (How to go and where to stay)ঃ


সড়ক পথ

মহাস্থানগড় যেতে হলে শুরুতেই আপনাকে যেতে হবে বগুড়ায়। ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব প্রায় ২১৪ কিঃ মিঃ। বগুড়া থেকে মহাস্থানগড়ের দূরত্ব প্রায় ৯ কিঃ মিঃ। বগুড়া থেকে মহাস্থানগড়ে বাস বা সিএনজি অটোরিকশা যোগে যাওয়া যায়। বগুড়া চারমাথা ও হাড্ডি পট্টি থেকে সেখানে মহাস্থানগড় যাওয়ার বাস পাওয়া যায় এবং সিএনজি অটোরিকশা চারমাথা, দত্তবাড়ি ও মাটিডালি থেকে পাওয়া যায়।
সড়কঃ
ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য গাবতলী আর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এসি-ননএসি বাস পাওয়া যায়। এর মধ্যে এসআর পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, হানিফ ইন্টারপ্রাইজ, এসআর ট্রাভেলস উল্লেখযোগ্য।
  • শ্যামলী পরিবহন, ☎ ০২-৯০০৩৩৩১, ০২-৭৫২০৪০৫
  • এসআর ট্রাভেলস, ☎ ০২-৮০১৩৭৯৩, ০২-৮০৬০৮৭৬
  • গ্রীন লাইন পরিবহন, ☎ ০১৭১৬৯৭৬৭৭৫, ৯০০৮৬৯৪
  • শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, ☎ ০১৭১১০২০৬২৬
রেলঃ
বগুড়াতে একটি রেল স্টেশন আছে। রাজধানী থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস নিয়মিত বগুড়া থেকে যাওয়া আসা করে। 

রাত্রি যাপনঃ


বগুড়ায় রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে। পর্যটন মোটেল, নাজ গার্ডেন, নর্থওয়ে মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, মোটেল ক্যাসল এমএইচ, সেঞ্চুরি মোটেল, হোটেল সিস্তা, হোটেল আকবরিয়া, রেডচিলিস চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এন্ড আবাসিক হোটেল উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে হোটেল আল আমিন, হোটেল রয়াল প্যালেস, হোটেল সান ভিউ, হোটেল রাজমনি, হোটেল হানি ডে, হোটেল আজিজ উল্লেখ্য।



মহাস্থানগড় ভ্রমনে গিয়ে যে ৭টি দর্শণীয় স্থান কখনোই মিস করা ঠিক হবেনা  তা নিয়েই আজকের এই আলোচনাঃ


১. মাহী সওয়ার মাজার শরীফ:
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে একটি ঐতিহাসিক মাজার শরীফ রয়েছে। পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।

২. কালীদহ সাগর:
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দূর্গ রয়েছে। প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

৩. শীলাদেবীর ঘাট:
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।


৪. জিউৎকুন্ড কুপ:
মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের  পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

৫. জাদুঘর:

মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।

৬. বেহুলার বাসর ঘর:

মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা । এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।


৭. গোবিন্দ ভিটা:
মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত।



মহাস্থানগড়ের নতুন নতুন ছবি দেখতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। 


আরো পড়ুনঃ

ভাসমান পেয়ারার বাজার- বাংলাদেশের একমাত্র ভাসমান বাজার (Floating Payarar Bazar - The only floating market in Bangladesh)

No comments:

Post a Comment